Autism Awareness -Moonflower Autism Foundation

 

অটিজম , রহস্যের ধুম্রজালে ঢাকা একটি শব্দ
 
Mofijul Islam
Executive Director
Moonflower Autism Foundation
rislam_26@yahoo.com
mofijul77@gmail.com
01841632861
01712-793662 
 
চোখ দুটো বন্ধ করে কল্পনা করুন। প্রবাসে, অন্ধকার রাতে, একটা অজানা শহরের জনবহুল সড়কের পাশে আপনি দাঁড়িয়ে আছেন। চারিদিকে যানবাহনের শব্দ। আশপাশের কারও কথা আপনি বুঝতে পারছেন না। দু একটা শব্দ বুঝলেও আপনার চারিদিকের পরিস্থিতি বোধগম্য করতে পারছেন না। নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতে চাইছেন , তাও পারছেন না। এটি একটি অটিজম বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন শিশুর দৈনন্দিন অনুভব।
আবার কল্পনা করুন। আপনার ৫ টা ইন্দ্রিয়ই ওলটপালট হয়ে গেছে। যে কোন শব্দই আপনার কানে উচুঁ ভলিউমের মিউজিকের মত শোনাচ্ছে। আপনার বেডরুমের লাইটটা হাই পাওয়ার সার্চ লাইটের মত চোখে পীড়া দিচ্ছে। আপনার পরনের কাপড়টা গায়ে স্পর্শ করলেই শিরিষ কাগজের মত খসখসে লাগছে। একটা সেনসরি সমস্যাগ্রস্থ অটিজম বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন শিশুর প্রতিদিনকার অনুভূতি এটি।
রহস্যাবৃত অটিজম শব্দটি এসেছে গ্রীক শব্দ Autos থেকে । যার অর্থ self ।বাংলায় স্বয়ং বা স্বীয়।
১৯৪৩ সালে আমেরিকার শিশু মনোরোগ বিশেষজ্ঞ লিও ক্যানার সর্বপ্রথম বিশেষ ধরনের মনস্তাত্ত্বিক সমস্যায় আক্রান্ত কিছু শিশুর মধ্যে এই রোগটি সনাক্ত করে অটিজম শব্দটি ব্যবহার করেন।
নিজের মধ্যে গুটিয়ে থাকার প্রবণতার কারনেই রোগের এই নামকরণ । আগে অটিজমকে স্কিজোফ্রেনিয়া বলে ভুল করা হত।
অটিজম শব্দটির সাথে পরিচিত জনসাধারণ নেই বললেই চলে । এমনকি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদেরও অটিজম সম্পর্কে জ্ঞান সীমাবদ্ধ ।
অটিজম মস্তিষ্কে বিকাশের এক ধরনের প্রতিবন্ধকতা যা শিশুর জন্মের প্রথম ৩ বছরের মধ্যে দেখা দেয়। অটিজমকে Neuro biological Disorder বলা হয়।
অটিজমের ৩ টি প্রধান সমস্যা হচ্ছেঃ
১. মৌখিক ও অমৌখিক যোগাযোগে সমস্যা
২. সামাজিকতার সমস্যা
৩. সীমাবদ্ধ বা পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ ও আগ্রহ
এই তিনটি সমস্যাকে Triad of Impairment বলা হয়।
প্রায় অর্ধেক অটিজম বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন শিশু কথা বলতে পারেনা, পারলেও ঠিকমত মনের ভাব প্রকাশ বা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনা। আবার অনেক ক্ষেত্রে ইশারা বা অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমেও যোগাযোগ করেনা।
সঠিকভাবে ভাষা প্রয়োগ, নিজের অনুভূতি , চিন্তা বা চহিদা প্রকাশ করতে পারেনা। আবার অনেক ক্ষেত্রে নিজের পছন্দের বিষয় নিয়ে দীর্ঘ সময় কথা বলতে আগ্রহ দেখায়। ঠাট্রা বা বাগধারা বোঝেনা।
সামাজিক আদান প্রদান করতে চাইলেও কিভাবে করতে হবে বুঝে উঠতে পারেনা।
কিছু কিছু শিশু সামাজিক হলেও তাদের কথোপকথন স্বাভাবিক হয় না ও বেশিক্ষন চালিয়ে যেতে পারেনা। সমাজে এডজাস্ট করা তাদের জন্য কঠিন হয়। অন্যদের সাথে বন্ধুত্ব বা সম্পর্ক স্থাপন , আদান প্রদান মূলক খেলা, চোখে চোখে তাকানো, সামাজিক হাসি বিনিময় এসবে তাদের সমস্য থাকে।
একই কাজ বার বার করার , একা কথা বার বার বলার প্রবণতা থাকে। তারা অন্যের অনুভূতি বা চেহারার অভিব্যক্তিও অনেক ক্ষেত্রে বুঝতে অক্ষম।
মস্তিষ্কে তথ্য প্রক্রিয়ার সমস্যার কারণে এই শিশুরা কি শোনে, দেখে, অনুভব করে তা সঠিকভাবে বুঝতে পারে না। স্বাভাবিক যোগাযোগ পন্থা , সামাজিকতা, এমন কি সাধারণ খেলাও হাতে ধরে শিখাতে হয়। অনেকে এদের সুন্দর স্বাভাবিক চেহারা দেখে মনে করেন ওরা ইচ্ছাকৃত ভাবেই কথা বলে না বা অন্যের কথা শোনে না। এই ধারণাটা ভুল ।
অটিজম আক্রান্ত শিশুরা স্বাভাবিক নিয়মে যোগাযোগ, সামাজিক বা আচরণ করতে চাইলেও পারেনা । দৈনন্দিন সাধারণ বিষয়গুলো অনুধাবন করতেও এরা ব্যর্থ।
অটিজমের লক্ষণসমূহঃ
অটিজমের অনেকগুলো লক্ষণ থাকলেও সব গুলো সবার মধ্যে পরিলক্ষিত হয় না। যে কোন Combination এ লক্ষণ থাকতে পারে। প্রতিটি অটিজম বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন শিশু নিজ বৈশিষ্ট্যে Unique বা স্বতন্ত্র
যোগাযোগের ক্ষেত্রেঃ
১. নাম ডাকলে সাড়া দেয়না
২,কি চায় বলতে পারেনা
৩. কথা বলা শিখতে বিলম্ব হয়
৪.কোন নির্দেশ অনুসরণ করেনা
৫. কখনও কখনও বধির মনে হয়
৬.কখনও কখনও কানে শোনে মনে হয়
৭.আঙ্গুল দিয়ে দেখায় না বা টাটা বাই বাই করে না
৮.কিছু শব্দ বলত, এখন বলে না
৯.তোতা পাখির মত কথা অনুকরণ করে
১০. ভাবলেশহীন উদাসীনতা প্রদর্শন করে
১১. ইশারা ইঙ্গিত করে না
১২. কথার অর্থ বোঝে না মনে হয়
১৩. কৌতুক বা বাগধারা বোঝে না
সামাজিকতার ক্ষেত্রেঃ
১.চোখে চোখে তাকায় না
২. সামাজিক কারনে কাউকে দেখে মুচকি হাসি হাসেনা
৩. একা একা খেলতে পছন্দ করে
৪. নিজেই প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে নেয়
৫. চোখে চোখে তাকানোর ব্যাপারে দুর্বল
৬.নিজের জগতে থাকে
৭. সবাইকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে
৮. অন্য শিশুদের প্রতি আগ্রহী নয়
৯.বড়দের হাত ধরে প্রয়োজন বোঝায়
১০. বড়দের অনুরোধে খেলায় যোগ দেয়
১২.কোলে ওঠার ব্যাপারে অনাগ্রহী
আচরণের ক্ষেত্রেঃ
১.কাল্পনিক খেলায় অপারগতা
২.ধংস্বাত্মক, আক্রমনাত্বক বা আত্মঘাতী আচরণ
৩.খেলনা দিয়ে সঠিক ভাবে খেলে না
৪.বদ মেজাজ /জিদ করা
৫.অত্যন্ত চঞ্চল/ অসহযোগী বা বিপরীতমুখী
৬. মনোযোগের অভাব
৭. নিয়ম বা রুটিনে পরিবর্তনে ঘোর বিরোধীতা
৮. বারংবার একই জিনিসে/কাজে আটকে যায়
৯. বুড়ো আঙ্গুলের উপর ভর করে হাটে
১০. কোন জিনিস/ খেলনার প্রতি অসাধারণ আসক্তি
১১. জিনিসপত্র এক লাইনে সাজায়
১২. কোন কোন শব্দ বা ঃবীঃঁৎব এর প্রতি অতিরিক্ত সংবেদনশীল
১৩. চলাফেরার ধাঁচে অস্বাভাবিকতা
১৪. শারীরিক বিপদ ও যন্ত্রনার ব্যাপারে অসংবেদনশীলতা
১৫. ঘুমের সমস্যা
ক্স অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বারংবার নাড়াচাড়া, যেমনঃহাত ঝাঁকানো, দুলুনি ইত্যাদি
Autism Spectrum Disorder
অটিজমকে Autism Spectrum Disorder বলা হয় কারন এর বিস্তৃতি ব্যাপক। এই ¯ Spectrum অতি মাত্রায় সমস্যাগ্রস্থ, স্বল্পবুদ্ধি, স্বল্প সম্পন্ন, মানসিক প্রতিবন্ধীতাসহ উচ্চ মেধা সম্পন্ন আত্মনির্ভরশীল কিন্তু সামাজিকতায় পেছানোদেরকেও ফেলা হয়
অটিজম কোন মানসিক রোগ নয়।
 
অন্যান্য সমস্যাঃ
অটিজম আক্রান্ত শিশুর অনেক ক্ষেত্রে সেনসরি সমস্যা অর্থাৎ পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের সমস্যা থাকতে পারে। দেখা, শোনা, স্পর্শ, ঘ্রান ও স্বাদ- এই গুলোর যে কোন একটি বা একাধিক বিষয়ে সংবেদনশীল হতে পারে। কোন কোন বিশেষ শব্দ, রং, ঘ্রান সহ্য করতে পারে না। কোলে ওঠা পছন্দ করে না, আবার সব কিছু মুখে দেয়, চিবায়। নিজের মুখে বা আঙ্গুল দিয়ে শব্দ করে। অনেকের epilepsy,anxiety, phobia ev depression ও থাকতে পারে
অটিজম বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন শিশুদের uneven skill development হয়ে থাকে। অর্থাৎ কোন কোন ক্ষেত্রে খুব দুর্বল আবার কোন কোন ক্ষেত্রে অত্যন্ত দক্ষ হতে পারে। প্রায় ১০ ভাগ শিশু গণিত, ছবি আঁকা, সঙ্গীত, পাজেল মিলানো, কম্পিউটার বা যে কোন বিষয়ে অসাধারণ দক্ষতা দেখাতে পারে।
উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে অটিজম বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীতে আশংকাজনক হারে বেড়ে যাচ্ছে। ১৯৬৬ সালে প্রতি ২০০০ জনে ১ জন , ১৯৯৬ প্রতি ৫০০-১০০০ জনে ১ জন এবং ১৯৯৯ সালে প্রতি ৩৩৩ জনে ১ জন অটিজমে আক্রান্ত বলে গবেষণার মাধ্যমে জানান । বর্তমানে আমেরিকায় প্রতি ৩৬ জনে ১ জন এবং পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে প্রতি ২৫০ জনে ১ জন অটিজমে আক্রান্ত।
বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার হিসেবে প্রতি ১০০ জন অটিজমে আক্রান্ত।
বাংলাদেশে কোন পরিসংখ্যান নেই তবে এর সংখ্যা অনুরূপ বলে আমাদের ধারনা। অটিজমে আক্রান্ত ছেলে মেয়ের আনুপাতিক হার ৪ঃ.১ । অর্থাৎ প্রতি ৪ টি ছেলের মধে ১ টি মেয়ে অটিজম বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হয়ে জন্মায়।
অটিজম রোগটির সুনির্র্দিষ্ট কারণ এখনও জানা যায়নি। উন্নত দেশগুলোতে গবেষণা অব্যাহত রয়েছে। মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক গঠন, বৃদ্ধি বা ফাংশনের অস্বাভাবিকতার কারনে অটিজম হয়ে থাকে। জন্মের সময়, পূবে, বা পরে মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ার ফলে অটিজম হতে পারে ।
জেনিটিক ফ্যাক্টরও খুব গুরুত্বপূর্ণ। লালন পালনে অভিভাবকের অবহেলা, অভিভাবকের মানসিক অবস্থা, আদর স্নেহের অভাব থেকে অটিজম হতে পারেনা । আবার পরিবারের আর্থিক অবস্থা, শিক্ষাগত যোগ্যতা বা জীবন যাপনের ধারার উপর নির্ভর করে অটিজম হয় না।
পরিবেশ জনিত কারনে যেমন এম এম আর ভ্যাকসিন, খাবারের গ্লুটেন, ক্যাসিন, ক্যান্ডিডা এলবিকানস নামক ছত্রাক,বিষাক্ত কেমিক্যাল,যেমন মার্কারী, কীটনাশক, শিল্পকারখানার বর্জ্য ইত্যাদিকে দায়ী করা হলেও বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণায় প্রমান করা যায়নি।
অটিজমের কোন যাদুকরী চিকিৎসা নেই। অটিজম ডায়াগনসিসের কোন বায়োলজিক্যাল মার্কার বা মেডিকেল ডিটেকশন নেই। বিভিন্ন বৈশিষ্ট ও লক্ষণ দেখে অটিজম সনাক্ত করা সম্ভব। আমেরিকান সাইকিয়্যাট্রিক এসোসিয়েশন এর DSM V বৈশিষ্টের মাধ্যমে সুনির্দিষ্টভাবে অটিজম ডায়াগনসিস করা সম্ভব। অটিজম বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন শিশুর ডায়াগনসিস ও ইন্টারভেনশন যত ছোট বয়সে শুরু করা যায় তত বেশি উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ইন্টারভেনশন বলতে শিশুর সাথে interaction, তার উপযোগী প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বোঝায়। খুব কম বয়সে অটিজম ডায়াগনসিস হওয়া অত্যন্ত জরুরী। দ্রুত রোগ নির্ণয় ও intensive intervention অটিজম বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন শিশুর সামগ্রিক উন্নতির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য, স্থায়ী এবং ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
প্রতিটি অটিজম বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন শিশুর প্রতিভা ও সীমাবদ্ধতাকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করে একটি যথোপযোগী শিক্ষা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে পারলে এরা বিশেষভাবে উপকৃত হতে পারে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে সংসারে, সমাজে এই সব শিশুদের গ্রহণযোগ্যতা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। একটি বন্ধূসুলভ অনুকূল পরিবেশ পেলে অটিজম বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন শিশুরা সমাজের বোঝা না হয়ে আতœনির্ভরশীল হতে পারে এবং দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ডে সর্ম্পক্ত হয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে।




 

Comments

Popular posts from this blog

Founders of Moonflower Autism

General Meeting

MOONFLOWER AUTISM FOUNDATION